কুমিল্লার চান্দিনা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মামুন পারভেজকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অধ্যক্ষকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার মামলায় তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেন।
গ্রেপ্তারের পর, শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত চান্দিনা উপজেলার গেট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের দাবি, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা এবং তিনি নিঃশর্ত মুক্তি পাওয়ার অধিকারী। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘অধ্যক্ষকে মুক্তি দাও’ এবং ‘মিথ্যা মামলা, বিচার চাই’ স্লোগানে সড়কে অবস্থান নেন। এর ফলে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় দিকে অন্তত সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়, যা যাত্রী ও চালকদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অধ্যক্ষ মো. মামুন পারভেজের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ, গত কিছুদিন আগে চান্দিনা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গেলে কলেজ প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। এছাড়া, কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে তাদের আন্দোলনকে সহিংস পথে পরিচালিত করতে পুলিশকে উসকানি দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ জড়িত ছিলেন। তবে, অধ্যক্ষ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং বলেছেন, আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হোক, এমনটাই তিনি চাইতেন।
অধ্যক্ষের গ্রেপ্তার হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ তুলে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, অধ্যক্ষ একজন সৎ ও পরিশ্রমী শিক্ষক, যিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছেন। শিক্ষার্থীরা তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল না এবং মহাসড়ক অবরোধ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। ওই সময় মহাসড়কের ওপর হাজারো যানবাহন আটকা পড়ে এবং যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হন চট্টগ্রাম ও ঢাকার দিকে যাত্রা করা হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে, যাত্রীদের মধ্যে বাস, ট্রাক এবং ছোট গাড়ির চালকরা তীব্র দুর্ভোগে পড়েন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চান্দিনা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণেও বিক্ষোভ করেন। তারা দাবি করেছেন, অধ্যক্ষকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাদের ভাষায়, “আমরা আমাদের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় দেখতে চাই না। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তারা বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না থাকার পরও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন।
এদিকে, প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তবে, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। তারা জানিয়েছেন, যতদিন না তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে নেওয়া হচ্ছে, ততদিন তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
চান্দিনা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের গ্রেপ্তারের ঘটনা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, তেমনি এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছে, তবে শিক্ষার্থীদের দাবি যদি মেনে না নেওয়া হয়, তবে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে।