রাজধানীর গণভবন এলাকায় যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মো. জসিম মিয়া (৩৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ দিন পর মারা গেছেন। শনিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
জসিম মিয়া কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণচর নোয়াগাঁও গ্রামের মো. খলিল মিয়ার বড় ছেলে। তাঁর শ্যালক পাভেল মিয়া জানান, জসিম মিয়ার ছোট ভাই আল আমিন ও আলাউদ্দিন অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জসিম। বৃদ্ধ ও অসুস্থ মা–বাবার দায়িত্বও তাঁর ওপর ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
গত ২৮ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে রাজধানীর গণভবন এলাকায় যাত্রীবেশে তিন ছিনতাইকারী জসিম মিয়ার ওপর হামলা চালায়। অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টায় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তাঁর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে। এরপর অটোরিকশাটি ফেলে পালিয়ে যায় তারা। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় জসিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ দিন পর, আজ দিবাগত রাতে, তাঁর মৃত্যু হয়।
জসিম মিয়ার মৃত্যুর খবর তাঁর গ্রামে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর স্ত্রী রাশেদা আক্তার বিলাপ করে বলেন, “আমাদের একমাত্র ছেলে আশরাফুল ইসলাম দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। দুই মেয়ে তাছলিমা নবম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে। এখন তাঁদের পড়াশোনা চালানোর খরচ কে দেবে? আমাদের তো নিজের জায়গাজমিও নেই। আমি কীভাবে সংসার চালাব?”
রাশেদা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “কোন ডাকাত আমার স্বামীকে মারল? কেন আমার নিরপরাধ স্বামীকে হত্যা করল? আমি কাকে বিচার চাইব?”
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনউদ্দিন আহমেদ জানান, আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গ্রামের মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জসিম মিয়াকে দাফন করা হয়। তিনি বলেন, “জসিম মিয়ার অকালমৃত্যুতে পরিবারটি উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারাল। তাঁর তিন সন্তানই ভদ্র ও মেধাবী। যদি কোনো দানশীল ব্যক্তি তাঁদের পাশে দাঁড়ান, তাহলে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।”
মেঘনা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. ইমাম হোসেন বলেন, “জসিম মিয়ার তিন সন্তানই মেধাবী ও ভদ্র। তাঁরা পরিবারের গর্ব।”